ভুতুড়ে বিমান – শামসুদ্দীন নওয়াব Tin Goyenda

Photo of author

By Nj Disha

তিন গোয়েন্দা Tin Goyenda , ভলিউম ১১৪ – বাংলা গল্প Book Review

 

ভুতুড়ে বিমান - শামসুদ্দীন নওয়াব Tin Goyenda

কিশোর তার চাচা- চাচির সাথে এয়ারপোর্টে যাচ্ছে, মার্ককে আনতে। সে অস্ট্রেলিয়ার সিডনি থেকে আসছে। প্রতিবছর রকি বীচ থেকে একজন ছাত্র বিদেশ যায় এবং বিদেশ থেকে একজন বীচে আসে। সারা বছর একটি পরিবারের সাথে থেকে পড়াশুনা করে। এইবার কিশোরের পরিবার এই কাজটির দ্বায়িত্ব নিয়েছে। রকি বীচ এয়ারপোর্ট কিশোরের ভালো লাগে না, তার কারণ এখানের একটি ভুতুড়ে কাহিনী রয়েছে। রকি বীচ এয়ারপোর্ট বানানোর সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় ক্যাপ্টেন স্টার যিনি প্রথম বিশ্বযুদ্ধে ইউএস আর্মি পাইলট ছিলেন, তিনি বলেন তিনিই প্রথম বিমান ল্যান্ড করবেন। প্রথম এয়ারপোর্ট চালুর দিনে আবহাওয়া ভারী ছিল। স্টারের বিমানটি মেঘমুক্ত আকাশে দেখা গেলেও হঠাৎ করেই কুয়াশাচ্ছন্ন মেঘের মধ্যে ঢুকে যায়। তারপর থেকে সেই ক্যাপ্টেনকে আর কখনো দেখা যায় নি।

কিশোর লাউঞ্জের পাশে মার্কের বিমানটি দেখার জন্য দাঁড়ায়। হঠাৎ করেই দেখে সেই বিমানটিও কুয়াশার মধ্যে চলে যাচ্ছে। কিন্তু কিশোর তার চাচা- চাচিকে ডাকলে তারা ঠিকিই দেখে বিমানটি ভালো ভাবে ল্যান্ড করছে। কিশোর কিছুসময় পরে পাইলটকে জিজ্ঞাসা করলে পাইলটও একদম না করে বলে কোনই কুয়াশা ছিল না ল্যান্ডিই রর সময়। মার্ককে প্রশ্ন করায় সেও একই জবাব দিল, যে এমন কিছুই সে দেখে নি। কিন্তু ল্যান্ডিং করার সময় সব আলো কিছু সময়ের জন্য নিভিয়ে দেয়া হয়েছিল, একদম অন্ধকার হয়ে ছিল। বাড়িতে পৌঁছে চাচা- চাচি মার্ক কে তার রুম দেখাতে নিয়ে গেলে কিশোর দেখে টেবিলে মার্কের কিছু কাগজ পরে থাকে। কিশোর তখন খেয়াল করে মার্ক যখন গাড়িতে তার দিকে তাকিয়ে ছিল তার চোখজোড়া নীল, কিন্তু কাগজের ছবিতে তার চোখজোড়া গাঢ় বাদামি দেখাচ্ছে।

সকালে নাস্তার টেবিলে বসে কিশোর ঠান্ডা পানি নিতে গেলে কোল্ড ফসেট থেকে গরম পানি বের হলে তা খেতে গিয়ে কিশোরের ঠোঁটটাই ফুলে গেছে। কিন্তু হঠাৎ ফসেট থেকে ঠান্ডা পানির জায়গায় গরম, আর গরম পানির জায়গায় ঠান্ডা পানি কেন আসলো! কিশোরসহ তার পরিবারের সবার কাছেই বিষয়টি আজানা। স্কুলে যাওয়ার পথে রবিনের সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়ে রাস্তার এগোতেই মিসেস মিলফোর্ডের গাড়িটি তার দিকে আসছে। কিশোর লাফ দিলে পরে যায় সে। তারপর রবিনের মা মিসেস মিলফোর্ড তাড়াতাড়ি গাড়ি থেকে নেমে এসে বলেন হঠাৎ কি হলো যেন ফরওয়ার্ড গিয়ার দিলেন তিনি কিন্তু গাড়ি পিছন দিকে কেন আসলো? (Tin Goyenda)

তারপর কিশোর ব্যাকগিয়ার দিতে বললেন। তাতে দেখা গ্রল গাড়ি সামনের দিকে গেল। টিফিনের সময় কিশোরের আজকের ফুটবল ম্যাচের কথা জানালো মার্ককে। ম্যাচের দুমিনিটের মধ্যেই এক গোলে এগিয়ে গেল অন্যদল। তারপর কিশোরকে তুলে নিয়ে মার্ককে নামানো হল। এটি দেখে কিশোর একটু অবাক হয়ে গেল। তারপর আর কোন গোল হয় নি কিন্তু কিশোরের টিম হেরে গেছে। বাড়ি ফেরার সময় রাস্তা পার হবে কিশোর সবুজ বাতি দেখেই রাস্তায় নামে,কিন্তু একটি গাড়ি অনেক হর্ণ বাজিয়ে কাছে আসলে একটুর জন্য লাগে না কিশোরকে। লোকটি বলে দেখে রাস্তায় চলাফেরা করতে।কিন্তু কিশোর সবুজ বাতি দেখেই রাস্তায় নেমেছিল। পাশে তাকিয়ে দেখে মার্ক কার্বেই দাঁড়িয়ে আছে। দৌড়ে মার্ক কিশোরের কাছে এলে সে বলে কিশোরকে অনেকবার ডেকেছে। কিন্তু কিশোর শুনতে পারে নি।

Tin Goyenda

ডিনার শেষ করে কিশোর তার রুমে গিয়ে এয়ারকন্ডিশনটা চালু করে পরতে বসলে তার আরোও গরম লাগতে লাগে। সে বুঝতে পারে এয়ারকন্ডিশন থেকে গরম বাতাস বের হচ্ছে। কিশোর ঘর থেকে বাইরে বের হতে চাইলে সে ঘরের দরজা খুলতে পারে না। কিন্তু তার ঘরের দরজায় কোন লক নেই। সে তার চাচা- চাচিকে ডাকলে তারা এসে অনেক কষ্টে তাকে ঘর থেকে বের করে।
সারাদিন এত ঘটনা ঘটার পর ঘুমাতে যাওয়ার সময় কিশোর মার্কের ঘর থেকে কথা বলার শব্দ শুনতে পেল। তাও দুজনের কন্ঠ শুনা যাচ্ছিল। তুমি ঠিকমতো কাজ করছো কে যেন মার্ককে বলছে। কিন্তু মার্ক বলছে সে এইসব আর করতে চায় না। উত্তরে অপর কন্ঠটি বলে তুমি না চাইলেও করতে হবে তোমার।

কারণ তোমার দেহ, তোমার আত্মা সব আমার। কিন্তু অন্য কন্ঠটি বলে উঠলো আমি আপনাকে আর কিছুই করতে দিব না। জবাবে বলে উঠলেন তুমি কিছুই করতে পারবে না, তুমি নিরুপাই। কিশোর হঠাৎ করেই রুমের মধ্যে ঢুকলে দেখে মার্ক বিছানায় শুয়ে আছে। কিন্তু কি যেন একটা মার্কের শরীরে প্রবেশ করলো। মার্ককে ডেকে তুলে কার সাথে কথা বলছে জানতে চাইলে সে বলে কারো সাথেই না। তার ঘুমের মধ্যে কথা বলার অভ্যাস আছে। (Tin Goyenda)

পরেরদিন কিশোরের চাচি কিশোরকে বলে মার্ককে নিয়ে উইকএন্ডে হাইকিং করে আসতে। ইচ্ছা না থাকা সত্ত্বেও কিশোর রাজি হয়। স্কুলে আজ কিশোরের রিপোর্ট জমা দেওয়ার দিন। রিপোর্ট জমা দেওয়ার সময় পরতে হয় তখন তার টিচার রেকর্ড করে রাখেন। পড়া শুরু করার সময় হঠাৎ করেই কিশোর মাথা ঘুরে পরে যায় ক্লাসে। জ্ঞান ফিরলে স্কুলের ডাক্তার দেখে বলেন কিশোর এখন ঠিক আছে।

ডুগির সাইকেল দেখে মার্ক কিশোরকে বলে একটা চ্যালেঞ্জ হয়ে যাক। সামনের ঢিবি পর্যন্ত যাবে, আবার এখানেই যে আগে আসবে সে জিতে যাবে। ঢিবির কাছে গিয়ে কিশোর ব্রেক চাপার চেষ্টা করলে আরও জোরে ছুটছে সাইকেল। সবই যখন উল্টো ঘটছে তাই কিশোর পেডেল ঘুরাতে শুরু করলে গতি কমতে থাকে। ঠিকমত ফিরে এলে সবাই জিজ্ঞেস করে সে ঠিক আছে কি না! মার্ক বলে এই পরীক্ষায় তুমি উতরে গেছ। কিশোর আর মানে জানতে চাইলো না। কারন সে জানে তাতে কিছুই হবে না। কিশোর বুঝে গেল ক্যাম্পিঙে তার সাথে কিছু হতে চলেছে।

Tin Goyenda

পরেরদিন শনিবারে সবকিছু গুছিয়ে নিয়ে কিশোর আর মার্ক ক্যাম্পিঙের জন্য বেরিয়ে গেল। অন্ধকার হয়ে এলে মার্কের পছন্দ অনুযায়ী জায়গায় তারা তাবু ফেলে আগুন জ্বালিয়ে খেয়ে নিল। কিশোর মার্ককে ঘুমাতে যেতে বলে। সে বাইরে আগুনের কাছেই বসে রইলো। কিশোরের চোখ লেগে আসলে কেউ একজন কিশোরের নাম ধরে ডাকছে। কিশোর কন্ঠ টা চিনতে পারে, সেদিন মার্কের ঘরে এই কন্ঠই সে শুনতে পেয়ে ছিল। কে জানতে চাইলে কন্ঠটি বলে উঠে তুমি সব পরীক্ষায় পাস করেছো। তুমিই পারফেক্ট হোস্ট হতে পারবে।

এতে কিশোর তার পরিচয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, তিনি ক্যাপ্টেন স্টার। তিনি কিশোরকে বলে ওরা তাকে ল্যান্ড করতে দেয়নি। এতদিন তার আত্মা সুন্দর একটা ল্যান্ডিং এর অপেক্ষায় ছিল। স্টার বলেন এই কয়েকদিন তোমার সাথে যা হয়েছে তা পরীক্ষা করার জন্য করা হয়েছে। কি হয়েছিল কিশোর জানতে চাইলো। সে স্টারকে কথাই আটকে সময় নেয়ার চেষ্টা করছে। সাথে সাথে সে পিছনে ব্যাগে হাত দিয়ে খুজছে। স্টার এদিকে বলেই যাচ্ছে কুয়াশা তার শরীর কে দখল করেছে। বন্দি করে আকারহীন, অবয়বহীন একটি অস্তিত্বে পরিণত করেছে। এর মধ্যেই কিশোর তার টর্চ লাইটটা খুঁজে পেল। আর সাথে সাথেই কুয়াশার কুন্ডলীর দিকে ধরলে ক্রমেই সংকুচিত হতে লাগলো। (Tin Goyenda)

সকালে মার্ক জানতে চাইলো কি মনে করে ফ্ল্যাশলাইটের আলো জ্বালিয়েছিলে! তখন কিশোর বলে প্রথম দিন তুমি বলেছিলে ল্যান্ডিং এর সময় আলো নিভিয়ে গিয়েছিল। তাই মাথায় আসলো যে অন্ধকারে মনে হয় আত্মা তোমার শরীরে প্রবেশ করেছিল। তাই আলোটা জ্বালিয়েছিল কিশোর। কটা বাজে মার্ক জানতে চাইলে কিশোর দেখে তার ঘরিতে সেকেন্ডের কাটা উল্টো দিকে ঘুরছে। ঠিক সেই সময় কিশোর আকাশে একটি বিমানের ইঞ্জিনের শব্দ শুনতে পেল। কিন্তু তাকালে কিছুই দেখতে পেল না। শুধু স্বচ্ছ নীল আকাশ।

 

Bangla Book Review
এই বইটির অডিও গল্প শুনতে চাইলে Dishas Storyplate

Leave a Comment